ঈদুল আজহার বর্জ্য অপসারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ব্যাপক প্রস্তুতি: ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্য

ঢাকা, বাংলাদেশ। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দ্রুততম সময়ের মধ্যে, অর্থাৎ কোরবানির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানী ঢাকা শহরকে বর্জ্যমুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দুই সিটি করপোরেশন। এই মহাযজ্ঞে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত থাকবেন।

বিশাল কর্মীবাহিনী ও বাতিল ছুটি: রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও মহল্লায় বর্জ্য অপসারণের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি মোট ২০,২৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে মাঠে নামাচ্ছে। এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে, যাতে তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের দিন (৭ জুন, শনিবার) দুপুর ৩টা থেকে শুরু হবে এবং আগামীকালের (৮ জুন, রবিবার) মধ্যে ঢাকাকে সম্পূর্ণ বর্জ্যমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম ও উপকরণ: কোরবানির বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে সংগ্রহ ও অপসারণের সুবিধার্থে দুই সিটি করপোরেশন প্রায় ১৩ লাখ ৯০ হাজার (ডিএনসিসি ১.২৫ মিলিয়ন এবং ডিএসসিসি ১.৪ লাখ) পলিথিন, পলি ব্যাগ এবং বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করেছে। এর পাশাপাশি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডিএসসিসির পক্ষ থেকে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাক, ৪৪টি কম্প্যাক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডার, ৫টি টায়ার ডোজা, ৯টি ওয়াটার ট্রাক, ২টি বুলডোজার, ৪টি এক্সকাভেটর, ৩টি ভেহিকেল মাউন্টেড এয়ার কম্প্রেসার, ২টি ফর্কলিফ্ট এবং ৩টি স্কিড লোডারসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডিএনসিসির জন্য ২২২টি ডাম্প ট্রাক, ৩৮১টি পিকআপ এবং ২৪টি পে-লোডার নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া, ১.২৫ মিলিয়ন পলি ব্যাগ, ২৫০০ ব্লিচিং পাউডার এবং ৪০০০ ক্যান স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে।

বর্জ্যের সম্ভাব্য পরিমাণ ও চ্যালেঞ্জ: কর্তৃপক্ষ অনুমান করছে, এ বছর ঢাকায় প্রায় ৭ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে, যা থেকে ৫০ হাজার টনেরও বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিএসসিসির এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার টন এবং ডিএনসিসির এলাকায় ২০ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হতে পারে। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে দুই সিটি করপোরেশন বদ্ধপরিকর।

জনগণের সহযোগিতা ও হটলাইন: বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকর করতে নগরবাসীর সহযোগিতা একান্ত কাম্য। সিটি করপোরেশনগুলো জনগণকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানি এবং বর্জ্য ফেলার জন্য উৎসাহিত করছে। এছাড়া, বর্জ্য সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য বা অভিযোগ জানাতে হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। ডিএসসিসির হটলাইন নম্বরগুলো হলো: ০১৭০৯-৯০০৮৮৮ এবং ০২২২-৩৩৮-৬০১৪। ডিএনসিসির কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো হলো: +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪ এবং ১৬১০৬।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ: পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ডিএনসিসি আমিন বাজারে দুটি ট্র্যাঞ্চ প্রস্তুত করেছে, যেখানে কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিবেশসম্মতভাবে ফেলা হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ এবং জুমার নামাজ ও ঈদগাহের খুতবায় বার্তা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।

পূর্ববর্তী সাফল্যের ধারাবাহিকতা: গত বছরগুলোতেও ঢাকা সিটি করপোরেশনগুলো কোরবানির বর্জ্য অপসারণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবারও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হবে, যা ধর্মীয় উৎসবের পরিবেশকে আরও সুন্দর করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *