আন্তর্জাতিকঃ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও উদ্ভাবক ইলন মাস্কের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের নাটকীয় বিচ্ছেদ ঘটেছে। একসময়কার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন তিক্ত বিবাদে রূপ নিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে, ইলন মাস্ক ট্রাম্পের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সম্পর্ক দ্রুত খারাপের দিকে মোড় নেয় যখন মাস্ক ট্রাম্পের বাজেট নীতির সমালোচনা করেন, যাকে তিনি “আর্থিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে অভিহিত করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প মাস্কের কোম্পানিগুলোর সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তি বাতিলের ইঙ্গিত দেন। মাস্কও পাল্টা ট্রাম্পের অভিশংসনের আহ্বানে সমর্থন জানান।

এই বিচ্ছেদের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ট্রাম্পের বাজেট বিল নিয়ে মাস্কের ধারাবাহিক সমালোচনা। মাস্ক এই বিলকে “অসন্তুষ্টকর ঘৃণ্য জিনিস” এবং “বিরাট, জঘন্য, শূকর-ভরা” বলে আখ্যায়িত করেন, যা দেশের বাজেট ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন যে, এই বিল মার্কিন নাগরিকদের “চূর্ণকারী অসহনীয় ঋণের” বোঝা চাপিয়ে দেবে।
ট্রাম্প এই সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মাস্ককে “মানসিকভাবে বিকৃত ব্যক্তি” (mentally deranged person) বলে অভিহিত করেন এবং উল্লেখ করেন যে, মাস্ক ইলেকট্রিক গাড়ির ট্যাক্স ক্রেডিট বাতিল করায় অসন্তুষ্ট, যা টেসলার ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, “আমাদের বাজেট থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাঁচানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইলনের সরকারি ভর্তুকি এবং চুক্তি বন্ধ করে দেওয়া।”
এই ঘটনায় মাস্কও দ্রুত X (পূর্বে টুইটার) এ তার প্রতিক্রিয়া জানান, যেখানে তিনি ট্রাম্পের “অকৃতজ্ঞতা” নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং দাবি করেন যে তার সমর্থন ছাড়া ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন। মাস্ক এমনকি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিতও দেন যা “মাঝারি ৮০% মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করবে।”
এই বিচ্ছেদের পেছনে আরও একটি কারণ হিসেবে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে মাস্কের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জ্যারেড আইজ্যাকম্যানকে নাসার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত। ট্রাম্প আইজ্যাকম্যানকে “সম্পূর্ণ একজন ডেমোক্র্যাট” বলে অভিহিত করেন।
এই জনসমক্ষে বিবাদ উভয়ের জন্যই সম্ভাব্য পরিণতি বয়ে আনতে পারে। ট্রাম্প প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং তরুণ ভোটারদের সমর্থন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন, আর মাস্ক সরকারি চুক্তি এবং নিয়ন্ত্রক যাচাই-বাছাই হারানোর সম্মুখীন হতে পারেন। এই ঘটনার পর টেসলার শেয়ার ১৪% এর বেশি কমে যায়, যা টেসলার বাজার মূল্য থেকে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেয় এবং মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পায়।
যদিও পরবর্তীতে উভয় পক্ষ থেকে কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে, তবে এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা মার্কিন রাজনীতি ও শিল্পে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।