ঢাকা, [৭ জুন ২০২৫] (প্রবাস ডেস্ক): আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। শুক্রবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেখানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। এই ঘোষণা বিএনপির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার প্রতিকূলতা এবং অন্যদিকে রমজান মাসের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার ও কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হবে। বিএনপি মনে করে, এই পরিস্থিতি নির্বাচনকে আরও পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় প্রশ্ন তোলা হয়, কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেননি। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বৈরাচার পতন হওয়ার পর জনগণ একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা করেছিল। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অযথা বিলম্ব সেই আশা ভঙ্গ করতে পারে।
এছাড়াও, বিএনপি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই সরকার সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামতকে অগ্রাহ্য করছে। এর ফলে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নিয়ে জনগণের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার দীর্ঘ ভাষণ প্রসঙ্গে বিএনপি জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া তার বক্তব্য প্রাসঙ্গিক বিষয় থেকে সরে গিয়ে বন্দর, করিডর ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত ‘ম্যান্ডেটের’ বাইরে। ভাষণে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রাখা হয়নি বলেও সভায় সমালোচনা করা হয়।
সব মিলিয়ে, বিএনপি তাদের পূর্বের অবস্থানে অনড় থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার এপ্রিল মাসের ঘোষণার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো সহ অন্যান্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকা।