রাজনীতিতে অনীহা, মাঠে ফিরছেন তামিম, তবে বিসিবিতে এ নিয়ে সংশয়: বিস্ফোরক মন্তব্য সাবেক অধিনায়কের।

ঢাকা, বাংলাদেশ। – দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সাবেক সফল ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল রাজনীতিতে যোগদানের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। একই সাথে, তিনি আগামী বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়ে মাঠে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ভবিষ্যৎ ভূমিকায় থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বোর্ডের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে।

রাজনীতিতে “না”: একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবেই পরিচিতি চান তামিম সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে তামিম ইকবালের উপস্থিতি তাকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা জন্ম দিলেও, তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি রাজনীতিতে আসতে প্রস্তুত নন এবং এই ক্ষেত্রে তার কোনো আগ্রহ নেই।

তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, “আমি রাজনীতিবিদ নই, আমি একজন ক্রীড়াবিদ।” তার মতে, দেশ ও জাতির উন্নতি ও পরিবর্তন আনার জন্য রাজনীতিবিদরাই বেশি যোগ্য। এই ধরনের সমাবেশগুলোতে তার উপস্থিতি কেবল ক্রীড়া সম্পর্কিত বিষয়ে কথা বলার জন্যই, বিশেষ করে চট্টগ্রামের খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে। এমনকি বিএনপি নেতৃত্বও জানিয়েছে, তামিমকে রাজনীতিতে আনার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

মাঠে ফেরার প্রস্তুতি ও বিপিএল-এর লক্ষ্য: ক্রিকেটভক্তদের জন্য সুখবর হলো, তামিম ইকবাল আগামী বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরতে প্রস্তুত হচ্ছেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো এবং আগামী মাসেই তার কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। বিপিএল ২০২৫-এ তিনি ফরচুন বরিশালকে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন, যেখানে তিনি ব্যাট হাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও, ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এমনকি, তিনি ‘লেজেন্ডস লিগ’-এর মতো ইভেন্টগুলোতেও খেলার জন্য যোগ্য বলে মনে করেন।

বিসিবিতে ভূমিকা নিয়ে সংশয় ও কঠোর সমালোচনা: ইলন মাস্কের মতোই তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, বিসিবিতে তার সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, বোর্ডের কিছু পরিচালক সম্পর্কে তার স্পষ্ট মতামত হলো, তারা ক্রিকেটের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করেন না। এমন একটি পরিবেশে তিনি যুক্ত হতে চান না বলে উল্লেখ করেন।

সাবেক এই অধিনায়ক বারবারই যোগ্য এবং ক্রিকেট-জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিসিবিতে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, যেসব ব্যক্তি নিজেদের জেলা বা বিভাগীয় ক্রিকেটের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারেন না, তাদের বোর্ডে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি প্রকাশ্যেই বিসিবির সমালোচনা করে বলেছেন, “বোর্ডে ক্রিকেট ছাড়া আর সব কিছুই হচ্ছে।” তার মতে, প্রশাসনিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটে জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে এবং মূল খেলাটাই অবহেলিত হচ্ছে। তিনি খেলোয়াড়দের প্রতি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেও সোচ্চার ছিলেন এবং বিসিবিকে দোষীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও সম্প্রতি তিনি ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (CWAB)-এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন এবং একটি ক্রিকেট ক্লাবে বিনিয়োগও করেছেন, তবে বিসিবিতে অবিলম্বে কোনো প্রশাসনিক পদে যোগদানের পরিকল্পনা তার নেই বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

তামিম ইকবালের এই স্পষ্টবাদী মন্তব্যগুলি বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার রাজনৈতিক অনীহা, মাঠে ফেরার ঘোষণা এবং বিসিবি নিয়ে কঠোর অবস্থান – সব মিলিয়ে তার ভবিষ্যৎ পদক্ষেপগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন সবাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *